05 May 2024, 10:03 am

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ ; নিচ্ছিল হামলার প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ডাকে তথাকথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক তরুণের খোঁজ মেলেনি এখনো। এ অবস্থায় যে কোনো সময়ই নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দুই ধাপে ভারী অস্ত্র কেনার জন্য ১৭ লাখ টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে। একে-২২ ও একে-৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্যও পাওয়া গেছে বলে দাবি র‌্যাবের।

এছাড়া ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি।

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের অর্থ সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক সমন্বয়কসহ ৪ জনকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব। সে বিষয়ে জানাতে আয়োজন করা হয় এ সংবাদ সম্মেলনের।

গ্রেফতাররা হলেন- আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল (২৪), ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর (২২), মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু (২৩) ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া (৩৩)।

এদের মধ্যে বাচ্চু সংগঠনটির অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, সোহেল ও হানজালা হিজরত করা সদস্যদের সমন্বয়ক এবং জাকারিয়া সামরিক শাখার ৩য় সর্বোচ্চ ব্যক্তি বলে জনিয়েছে র‌্যাব।

এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি উগ্রবাদী বই, একটি প্রশিক্ষণ সিলেবাস, ৯ টি লিফলেট, একটি ডায়েরি এবং ৪টি ব্যাগ উদ্ধারের কথা বলেছে র‌্যাব।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাশকতার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের নাশকতার যে বিষয় রয়েছে, র‌্যাব ফোর্সেসের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে। আমরা ধরেই নিয়েছি, যেহেতু অনেকেই নিরুদ্দেশ রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু এটা নির্মূল হয়নি। আমরা কখনোই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। যে কোনো সময়ই যে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো আমাদের অনেক সদস্য পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছেন।

‘স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ রয়েছে এমন ৫৫ জনের যে তালিকা রয়েছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

নতুন জঙ্গি সংগঠনের আমির বাড়ি বিক্রি করে পরিবারসহ পাহাড়ে : এ বিষয়ে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সংগঠনের আমির মাহমুদ কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। প্রায় দুই বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন। পরবর্তী সময়ে, এক বছর আগে কুমিল্লার প্রতাপপুরে অবস্থিত তার সেমি পাকা বাড়িসহ জমি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কেনেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানে স্থানান্তরিত হন।

আমির মাহমুদ নাইক্ষ্যংছড়িতে চাষাবাদ, পোল্ট্রি ফার্ম ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন। এছাড়াও তারা সংগঠনটির মহিলা শাখার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছেন। আমরা বেশ কিছু মহিলা সদস্যের বিষয়ে জানতে পেরেছি যারা সংগঠনের চাঁদা প্রদানসহ দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা যাচ্ছে জঙ্গিদের কাছে: সংগঠনটির অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার বাচ্চুর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা প্রাপ্তির পরে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, হয়তো বেশকিছু অস্ত্র প্রশিক্ষণ বা নাশকতার জন্য তাদের দিয়ে থাকতে পারেন।

অস্ত্র কিনতে ১৭ লাখ : বিষয়টি যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাচ্চু দুই ধাপে ১৭ লাখ টাকা পাঠানোর তথ্য পেয়েছি। একে ২২ এবং একে ৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাদের কাছ থেকে এমন অস্ত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবো।

পাহাড় থেকে এসে কুমিল্লায় পালিয়ে ছিলেন তারা : গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, হিজরতকৃত সদস্যদের তত্ত্বাবধানসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তারা ২-৪ বছর আগে পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একাধিকবার দুর্গম পাহাড়েও প্রশিক্ষণ নেন তারা। সম্প্রতি র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা কুমিল্লার লাকসামে আত্মগোপনে ছিলেন।

আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। এরপর সাংগঠনিক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এছাড়া তারা পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারকেও আর্থিক সহযোগিতা দিতেন।

গ্রেফতার বাচ্চু চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবের অন্যতম সহযোগী এবং অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

গত ৮-৯ মাসে বিভিন্ন ধরনের ভারি অস্ত্র কেনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রায় ৩০ লখসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা পাঠান বাচ্চু বলে জানান র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 3578
  • Total Visits: 697940
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1125

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
  • ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:০৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018